সংস্কৃত প্রত্যয়ের মধ্যে ণিচ্ প্রত্যয় সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেক ধোঁয়াশা আছে। আজকের পোস্টে এই প্রত্যয় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ণিচ্ প্রত্যয় সম্পর্কে ধারণা
ণিচ্ প্রত্যয় একটি ধাত্ববয়ব প্রত্যয়। এই প্রত্যয়টি ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রযোজক ধাতু গঠন করে। কোন ক্রিয়া কর্তার দ্বারা সাধিত না হয়ে অপরের দ্বারা সাধিত হলে এ প্রত্যয় হয়, যথা- বৃধ+ণিচ্=বর্ধি বাড়ানো.।
যেমন: √জ্ঞা ধাতুর সঙ্গে ণিচ্ প্রত্যয় যোগ করলে নতুন ধাতু পাওয়া যাবে √জ্ঞাপি। জ্ঞা ধাতুর অর্থ নিজে জানা, জ্ঞাপি ধাতুর অর্থ অন্যকে জানানো।
পাণিনির “স্বতন্ত্রঃ কর্তা” (১/৪/৫৪) – এই সূত্রানুসারে যা স্বতন্ত্র অর্থাৎ স্বাধীনভাবে ক্রিয়া সম্পাদন করে তার কর্তৃসংজ্ঞা হয়। যথা-পাচকঃ অন্নং পচতি (পাচক অন্ন পাক করছে) – এই বাক্যে পাচক স্বতন্ত্র হওয়ায় কর্তৃসংজ্ঞা চরিতার্থ হয়েছে।
পরবর্তী “তৎপ্রযোজকো হেতুশ্চ” (১/৪/৫৫) সূত্রানুসারে যা স্বতন্ত্র কর্তাকে প্রেরণা দেয় তাকে প্রযোজক বা হেতুকর্তা বলা হয়। যে প্রয়োজিত (প্রেরিত) হয় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। কর্তার হেতুসংজ্ঞা হওয়ার পরেই “হেতুমতি চ” (৩/১/২৬) -এই সূত্রানুসারে প্রেরণা প্রভৃতি প্রয়োজক ব্যাপার বিবক্ষায় ণিচ্ প্রত্যয় হইয়া থাকে।
প্রযোজক কর্তা ণিজন্ত ক্রিয়ার দ্বারা উক্ত হয় বলে তাতে প্রাতিপদিকার্থমাত্রে প্রথমা বিভক্তি হয়। অণিজন্ত (ণিচ্ প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার পূর্বে) ক্রিয়ার কর্তা (পাচকঃ অন্নং পচতি-এই বাক্যে পাচকঃ) ণিজন্ত(ণিচ্ প্রত্যয়যুক্ত) অবস্থায় প্রযোজ্য হলে অনুক্ত হয় এবং তখন “কর্তৃকরণয়োস্তৃতীয়া” (২/৩/১৮) সূত্রানুসারে তৃতীয়া বিভক্তি হয়।
যথা – প্রভুঃ পাচকেন অন্নং পাচয়তি (প্রভু পাচক কে দিয়ে পাক করাছে) – বাক্যে প্রযোজক কর্তা ‘প্রভুঃ’, পাচয়তি – এই ণিজন্ত ক্রিয়ার দ্বারা উক্ত হওয়ায় উহাতে প্রাতিপদিকার্থমাত্রে প্রথমা বিভক্তি হয়েছে। এবং পাচকেন পদটি প্রযোজ্য হলে অনুক্ত হওয়ায় অনুক্ত কর্তায় তৃতীয়া বিভক্তি হয়েছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কর্তায় তৃতীয়া না হয়ে প্রযোজ্য কর্তা প্রযোজ্য কর্মসংজ্ঞা প্রাপ্ত হয়ে দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়। যথা-
১.গতিবুদ্ধি প্রত্যবসানার্থ শব্দকর্মাকর্মকাণামণি কর্তা স ণৌ (১/৪/৫২) –
এই সূত্রবলে গত্যর্থক, বুদ্ধ্যর্থক, প্রত্যবসানার্থক (ভোজনার্থক),শব্দকর্মক (শব্দরূপ কর্ম কারক যাহার) এবং অকর্মক ধাতুর অণিজন্ত অবস্থার কর্তা ণিজন্ত অবস্থায় কর্মসংজ্ঞা প্রাপ্ত হয়।
যথাক্রমে উদাহরণ-
অণিজন্ত | ণিজন্ত |
ছাত্রঃ বিদ্যালয়ং গচ্ছতি | শিক্ষকঃ ছাত্রং বিদ্যালয়ং গময়তি |
মাণবকঃ বেদং বেত্তি | আচার্যঃ মাণবকং বেদং বোধয়তি |
বালকঃ অন্নং ভুঙ্ক্তে | মাতা বালকম্ অন্নং ভোজয়তি |
ছাত্রঃ ব্যাকরণং পঠতি | অধ্যাপকঃ ছাত্রং ব্যাকরণং পাঠয়তি |
শিশুঃ শয্যায়াং শেতে | মাতা শিশুং শয্যায়াং শায়য়তি |
এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার যে, নী ও বহ্-ধাতু গত্যর্থক হলেও উহাদের অণিজন্ত অবস্থার কর্তা ণিজন্ত অবস্থায় কর্মসংজ্ঞা হয় না। যথা-নায়য়তি বাহয়তি বা ভারং ভৃত্যেন সঃ(সে তার ভৃত্যকে দিয়ে ভার পৌঁছে দিচ্ছে বা বহন করছে)।
প্রাসঙ্গিক বার্তিক-নীবহ্যোর্ন (বা.১১০৯)।
কিন্তু সারথিবাচক কোন শব্দ বহ্-ধাতুর প্রয়োজক কর্তা হলে এই বার্তিক অনুসারে নিষেধ হবে না অর্থাৎ উহার প্রযোজ্য কর্তার কর্মসংজ্ঞা হবে। যথা- বাহা রথং বহন্তি>সূতঃ বাহান্ রথং বাহয়তি (সারথি বাহনকে রথ বহন করিবার জন্য প্রেরণ করিতেছে। )
প্রাসঙ্গিক বার্তিক-নিয়ন্তৃকর্তৃকস্য বহেরনিষেধঃ(বা.১১১০)।
এইরকম অহিংসার্থক ভক্ষ্-ধাতু (যে ভোজনে হিংসার প্রতীতি হয় না),অদ্ ও খাদ্-ধাতু ভোজনার্থক হলেও উহাদের অণিজন্ত অবস্থার কর্তার কর্মসংজ্ঞা হয় না।
যথাক্রমে উদাহরণ-পুত্রঃ অন্নং ভক্ষয়তি>পিতা পুত্রেণ অন্নং ভক্ষয়তি(পিতা পুত্রকে অন্ন ভক্ষণে প্রেরিত করিতেছেন)। মাতা পুত্রেণ পরমান্নম্ আদয়তি। রাজা মুনিনা ফলং খাদয়তি।
প্রাসঙ্গিক বার্তিক যথাক্রমে-ভক্ষেরহিংসার্থস্য ন, আদি-খাদ্যোর্ন।
অনুরূপভাবে, অকর্মক ‘শব্দায়’ এই নামধাতুর অণিজন্ত অবস্থার কর্তা ণিজন্ত অবস্থায় কর্ম হয় না।
যথা- দেবদত্তঃ শব্দায়তে> স দেবদত্তেন শব্দায়য়তি (সে দেবদত্তকে দিয়ে শব্দ করাচ্ছে)।
প্রাসঙ্গিক বার্তিক-শব্দায়তের্ন।
২. জল্পতিপ্রভৃতীনামুপসংখ্যানম্–
এই বার্তিক অনুসারে জল্পতি প্রভৃতির অণিজন্ত অবস্থার কর্তা ণিজন্ত অবস্থায় কর্ম হয়।
যথা- গুরুঃ শিষ্যং ধর্মং জল্পয়তি/ভাষয়তি (গুরু শিষ্যকে ধর্ম বিষয়ে উপদেশ করিতে প্রেরণা করিতেছে)।
৩. দৃশেশ্চ–
দৃশ্ ধাতুর অণিজন্ত অবস্থার কর্তা ণিজন্ত অবস্থায় কর্ম হয়। যথা-শিশু চন্দ্রং পশ্যতি>মাতা শিশুং চন্দ্রং দর্শয়তি।
৪. হৃ-ক্রোরন্যতরস্যাম্ (১-৪-৪৩)–
হৃ ও কৃ-ধাতুর অণিজন্ত অবস্থার কর্তা ণিজন্তে বিকল্পে কর্ম হয়।
যথা- ভৃত্য কটং হরতি>প্রভুঃ ভৃত্যেন ভৃত্যং বা কটং হারয়তি
। দেবদত্তঃ যজ্ঞং করোতি>স দেবদত্তেন দেবদত্তং বা যজ্ঞং কারয়তি।
৫. অভিবাদি-দৃশোরাত্মনেপদে বেতি বাচ্যম্ –
এই বার্তিক অনুসারে অভি-পূর্বক বদ্-ধাতু ও দৃশ্ -ধাতু ণিজন্ত অবস্থায় আত্মনেপদে প্রযুক্ত হলে প্রযোজ্য কর্তা বিকল্পে কর্মকারক হয়।পরস্মৈপদে বিকল্পে হয় না।
যথাক্রমে উদাহরণ-ভক্তঃ দেবম্ অভিবদতি>গুরুঃ ভক্তেন ভক্তং বা দেবম্ অভিবাদয়তে। শিশুঃ চন্দ্রং পশ্যতি> মাতা শিশুনা শিশুং বা চন্দ্রং দর্শয়তে।
এই প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত কারিকাটি কণ্ঠস্থ করা অবশ্য প্রয়োজন–
গমনাহার-বোধার্থ-শব্দার্থাকর্মধাতুষু।
অণিজন্তেষু যঃ কর্তা স্যাণ্ণিজন্তেষু কর্ম তৎ।।
ন নী -খাদ্যাদি-শব্দায়-ক্রন্দ-হ্বাঃ কর্তৃকর্মকাঃ।
তথা ভক্ষিরহিংসায়াং বহো’সারথিকর্তৃকঃ।।
হৃ-ক্রোরপি তথা কর্তা ণিজন্তে কর্ম বা ভবেৎ।
অভিবাদি-দৃশোরেবমাত্মনে বিষয়ে পরম্।।