দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য ভারতীয় গণিতজ্ঞ
ভারতীয় গণিতজ্ঞ দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য
জন্ম | ১১১৪ খ্রিস্টাব্দ |
জন্ম স্থান | কর্ণাটকের অন্তর্গত বিজুড়বিড় (বর্তমানে বীজাপুর) |
পিতার নাম | মহেশ দৈবজ্ঞ |
কন্যা | লীলাবতী |
গ্রন্থ | (১) সিদ্ধান্তশিরোমণি (২) করণকুতূহল। |
আবিষ্কার | ক্যালকুলাস |
দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য টিকা
ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতের ইতিহাসে দ্বিতীয় ভাস্করাচার্যের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের দ্বিতীয় ভাস্করাচার্যের তিরোধানের পর তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানে ভারতের গৌরব অনেকটা কমে যায়।
দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য ১১১৪ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমঘাট পর্বতের কাছে কর্ণাটকের অন্তর্গত বিজুড়বিড় (বর্তমানে বীজাপুর) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল মহেশ দৈবজ্ঞ। তাঁর এক অসামান্য শক্তিসম্পন্ন কন্যা ছিল। নাম তাঁর লীলাবতী।
দ্বিতীয় ভাস্করাচার্যের লেখা দুটি গ্রন্থ পাওয়া যায় – (১) সিদ্ধান্তশিরোমণি, (২) করণকুতূহল।
ভারতীয় গণিতজ্ঞ দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য রচিত সিদ্ধান্তশিরোমণি
দ্বিতীয় ভাস্করাচার্যের লেখা ‘সিদ্ধান্তশিরোমণি’ জ্যোতিষশাস্ত্রের বিখ্যাত গ্রন্থ। এই গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে কিছু বাসনা নামে একটি টাকা লেখেন। জ্যোতিষ ও গণিতশাস্ত্রের উপর এমন মৌলিক গ্রন্থ তাঁর মৃত্যুর পরে কেউ রচনা করতে পারেন, তাই তাকে গণিত বিষয়ে সবশেষ মৌলিক গবেষক বলা যেতে পারে। পাশ্চাত্য গণিতের ক্যালকুলাস নামক প্রণালী তিনি সর্বপ্রথম স্বাধীনভাবে আবিষ্কার করেন।
‘সিদ্ধান্তশিরোমণি’-র চারটি অধ্যায়। এগুলি হল – (১) লীলাবতী, (২) বীজগণিত, (৩) গ্রন্থগণিত এবং (৪) গোল।
সিদ্ধান্তশিরোমণি গ্রন্থের প্রথম অধ্যায় লীলাবতী
পাটিগণিত বিষয়ক প্রথম অধ্যায়টি গ্রন্থকারের বিদুষী কন্যা লীলাবতীর নামানুসারেই নামাঙ্কিত। আবার কেউ কেউ বলেন লীলাবর্তী নিজেই এই প্রথম অধ্যায়টি লিখেছেন। বিবাহের অব্যবহিত পরেই পতিবিয়োগ হলে লীলাবতী পিতৃগৃহে থেকে পিতার সময় শিক্ষায় শিক্ষিত হন। তাঁর ব্যাখ্যা থেকে জানা যায় যে, ‘পার্টি’ শব্দের অর্থ ক্রম বা প্রণালী এবং গণিতশাস্ত্রীয় যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ প্রভৃতি আলোচিত হয় বলে এই শাস্ত্রকে পাটিগণিত বলে।
লীলাবতী অধ্যায়ে পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি সম্বন্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়েছে যেগুলি গণিতশাস্ত্রের অমূল্য সম্পদ ।
সিদ্ধান্তশিরোমণি গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায় পাটিগণিত
জ্যোতির্বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পাটিগণিতের উন্নতি ঘটতে থাকে। ভাস্করাচার্যের সিদ্ধান্তশিরোমণি’ ও ‘লীলাবতী’-তে ভারতীয় গণিতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচিত হয়েছে –
- (১) এখানে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ প্রভৃতি শব্দের উল্লেখ ও আলোচনা আছে।
- (২) লীলাবতীর ২/১০-১১-তে বিভিন্ন দশাঙ্কের অঙ্কের মানের কথা পাওয়া যায়।
- (৩) প্রশ্নোত্তরে পদ্ধতি বা নির্ণয়ের কতকগুলি উদাহরণ।
- (৪) লীলাবতীর ২/১/১২-তে সংখ্যাগুলির যোগফল তাদের স্যানানুসারে এবং বিয়োগফল তাদের পার্থক্যানুসারে গৃহীত হয় এই তত্ত্ব পাওয়া যায়।
- (৫) লীলাবতীর ২/১৫/৬-তে ইষ্টগুণের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে।
- (৬) ঘনফল নির্ণয়ের উদাহরণ ভাদরাচার্য নিয়েছেন – “ন্যাসঃ” ১/২৭/১২৫ প্রভৃতি (লীলাবতী)।
- (৭) ভাস্করাচার্য তাঁর লীলাবতীতে (২/১৫/৬) গুণ ও ভাগের সূত্রগুলির প্রয়োগ দেখিয়েছেন।
সিদ্ধান্তশিরোমণি গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায় বীজগাণিত :
বীজগণিত যে গণিতজ্ঞদের আনন্দের কারণ তা দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য তাঁর লীলাবর্তীতে বলেছেন –
“ততো বীজৎ প্ৰবক্ষামি গণকানন্দকারণম্।”
বীজগণিতের গুণ ও ভাগের প্রক্রিয়া লীলাবতীতে বিস্তৃত আলোচিত হয়েছে। এখানে একমাত্রার সরল সমীকরণ একমাত্রায় অনির্ণেয় সমীকরণ, দ্বিঘাত সমীকরণ, উচ্চঘাত ও ত্রিঘাত সমীকরণ আলোচিত হয়েছে।
সিদ্ধান্তশিরোমণি গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায় জ্যামিতি
পরবর্তীকালের গণিতজ্ঞগণ গণিতের অঙ্গ হিসাবে জ্যামিতির চর্চা করেন। গীলাবতীতে জ্যামিতির বিভিন্ন তত্ত্ব ও তথ্য হয়েছে। যেমন –
(১) লীলাবতীর ২৬ সংখ্যক শ্লোকে ছায়া ব্যবহার নামে একটি বিভাগে উদাহরণসহ উচ্চতা ও দূরত্ব সরের সূত্র আলোচিত হয়েছে।
(২) চন্দ্রের দ্রাঘিমা নির্ণয় করতে গিয়ে দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য কলনবিদ্যা, সমকলন ও অন্তরকলন বিদ্যার বলেছেন।
৩) গ্রন্থগণিতাধ্যায় ও গোলাধ্যায়ে দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য গোলকের তলের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের পদ্ধতি, চান্দ্রের প্রাঘিমা নির্ণয়, পৃথিবীর আকারের গোলত্ব ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বর্ণনা দিয়েছেন।
সিদ্ধান্তশিরোমণি-র তিনটি টাকা প্রসিদ্ধ । সেগুলি হল – মরিচিতিকা, বাসনাবার্তিক ও বাসনাভাষ্য।
গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য
গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য অবিস্মরণীয় নাম। তাঁর বিভিন্ন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের সত্যাসত্য নির্ণয়ের জন্য এবং প্রত্যক্ষ দর্শন ‘সিদ্ধান্তশিরোমণি’ গ্রন্থের জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য (FAQ)
‘পার্টি’ শব্দের অর্থ ক্রম বা প্রণালী এবং গণিতশাস্ত্রীয় যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ প্রভৃতি আলোচিত হয় বলে এই শাস্ত্রকে পাটিগণিত বলে।
দ্বিতীয় ভাস্করাচার্যের লেখা দুটি গ্রন্থ পাওয়া যায় – (১) সিদ্ধান্তশিরোমণি, (২) করণকুতূহল।
বীজগণিত
- আর্যভট্ট ও ভারতীয় গনিত
- দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য : ভারতীয় গণিতজ্ঞ
- ভারতীয় জ্যোতির্বিদ: ব্রহ্মগুপ্ত
- প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সাহিত্যের ধারনা
- আর্যভট্ট সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা
- বরাহমিহির-প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী
- (টীকা) আর্যভট্ট – উচ্চ মাধ্যমিক সংস্কৃত