বাণোছিষ্টং জগৎ সর্বম্- কাদম্বরী পাঠ্যাংশের অনুসারে বর্ননা

‘‘ বানোছিষ্টং জগৎ সর্বম্ ’’ কাদম্বরী পাঠ্যাংশের অনুসারে বর্ননা করা হল । বাণভট্টের পরিচয় , বাণভট্টের কাল , বাণভট্টের রচিত গ্রন্থ ও কাদম্বরীর কাব্যের আখ্যান ভাগ আলোচনা করা হল।

‘‘ বাণোছিষ্টং জগৎ সর্বম্ ’’ কাদম্বরী (বাণভট্ট)পাঠ্যাংশের অনুসারে বর্ননা কর

‘‘ বাণোছিষ্টং জগৎ সর্বম্ ’’ -ব্যাখ্যা

সংস্কৃত গদ্য কাব্যের জগতে এক অবিসংবাদীত নাম বাণভট্ট। তাঁর হস্তে এসে গদ্যকাব্য লাভ করেছে এক চরম উৎকর্ষ। সংস্কৃত গদ্য সাহিত্যে বানভট্টের অবদান অনস্বীকার্য ।

বাণভট্টের পরিচয়

কবি বানভট্টের পিতা ছিলেন বাৎস্য গোত্রীয় বেদজ্ঞ যাজ্ঞিক বংশের বংশধর চিত্রভানু। মাতা রাজদেবী। তিনি সোমরাট হংসের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিলেন।

বাণভট্টের কাল

হর্ষবর্ধন শিলাদিত্যের রাজত্ব বালের সমসাময়িক কবি। তাই তার কাল সপ্তম শতকের প্রথমার্ধ। যদিও অনেকের মতে ৬২০ খ্রীটাব্দ।

বাণভট্ট রচিত দুটি গ্রন্থ

কবি বানভট্ট রচিত দুটি গ্রন্থের নাম ১. হর্ষচরিত ২. কাদম্বরী ।

  • ১. হর্ষচরিত : এটি একটি আখ্যায়িকা শ্রেণীর গদ্য কাব্য।
  • ২. কাদম্বরী : আমাদের পাঠ্য কাদম্বরী কথাকাব্যের শ্রেষ্ঠ রচনা রূপে বিদিত।

এই দুটি ছাড়াও চণ্ডী শতক নামে একখানি গীতিধর্মী শতকগ্রন্থ তার রচনা বলে খ্যাত। মুকুটতাড়িতক, শারদচন্দ্রিকা নামে দুইখানি রূপক বানভট্ট রচনা করেছিলেন বলে ভোজের চরনায় জানতে পারি।

বাণভট্টের অন্যতম কৃতি কাদম্বরী

কবি সম্ভবত বৃহৎকথার রাজা সুখনাসের গল্পের উপর ভিত্তি করে এই কাহিনীটি কল্পনা করেন। কাদম্বরী কথার অর্থ সুরা। নায়িকার নাম অনুসারে কাব্যটির নামকরন হয়েছে। সুরার প্রভাবে মানুষ যেমন আত্মহারা হয়ে যায়, এই কাব্য পড়ে তদরূপ হয় বলে নামকরনটি সার্থক। এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।

‘‘কাদম্বরী রসজ্ঞানামহারোহপি ন রোচতে।’’

1 কাদম্বরীর কাব্যের নায়কচন্দ্রাপীড়
2 কাদম্বরীর কাব্যের নায়িকাকাদম্বরী
3কাদম্বরীর কাব্যের রীতিপাঞ্চালী
4কাদম্বরীর কাব্যের মুখ্যরসবিপ্রলম্ভ ও শৃঙ্গার
5কাদম্বরীর কাব্যের মুখ্যগুণ , মাধুর্য


কাদম্বরীর কাব্যের আখ্যান ভাগ

এক চণ্ডাল কন্যা কর্তৃক বিদিশাধিপতি শুদ্রকের নিকট আনিত বৈশষ্পায়ন নামে শুক এই গ্রন্থের কাহিনীর বর্ননা করেছেন।

আমাদের পাঠ্যাংশে দেখা যায় বিন্ধারন্যে এক প্রভাতের বর্ননা। কীভাবে সূর্য উঠার সাথে সাথে দিগন্তরালের অবস্থা যেমন তারাদের বিদায় বনের গাছের পাতা থেকে শিশির কনা পড়ায়, ময়ূর ও হস্তীদের জাগরন সেই সঙ্গে ভ্রমরদের গুঞ্জন এবং শুকপক্ষীদের খাদ্যের অন্বেষনে ইতস্তত ভ্রমন সব মিলিয়ে বর্ননাটি অতি সুন্দর।

বানভট্টই কবিদের মধ্যে শিরোপা

বানের পরবর্তী কালে বিদগ্ধ মহল বানকে যে সমস্ত শিরোপা দিয়েছেন ‘বানোচ্ছিষ্টং জগৎ সর্বম্’ তার মধ্যে একটি। এরূপ বলার কারন বান সবকিছু উচ্ছিষ্ট করে দিয়েছেন। জগতের এমন কিছু নেই যা রসাস্বাদক বান করেন নি বা রসাত্মক বাক্যে প্রয়োগ করেন নি।

বানভট্টের কাদম্বরী কাব্যে বর্ণনার প্রাচুর্য

পাঠ্যাংশের বর্ননা সত্যিই অদ্ভ‚ত যা পাঠকবিত্তকে নাড়া দেয়। বর্ননার রাজা তিনি। একই বর্ননা দুইবার নেই।শুনতে শুনতে ক্লান্তি নেই। মনের অনিচ্ছা নেই যেন উত্তরোত্তর শুনতে আরো ইচ্ছা জাগে। সেই সিন্ধ্যাচলের ভয়ংকর বর্ননা, শবর সেনাদির বিঙ্গারন্যে রোমাঞ্চকারী ঘটনা। জবালিক, অনস্ত্য মুনির আশ্রমে মনোহর কাহিনী পাঠক চিত্তকে দ্রবীভূত করে।

পাঠ্যাংশের প্রভাতের বর্ননা, বৃদ্ধব্যাধের বর্ননা, নিরাশ্রয়ে শুকশাবকদের বর্ননা সত্যিই অপূর্ব। প্রভাতের বর্ননা কালে বৃদ্ধ রদ্ধুহরিনের লোমের সঙ্গে পান্ডুর দিকচক্রবালের উপমা। তপোবনের রাসবলোম ধূসর অগ্নিহেত্রের ধূমলেখাকে ধর্মপতাকা বলে উৎপ্রেক্ষিত করা।

কবি রচনায় দেখা যায় অতিশয় সমাসদ্ধ পদরাজী ও সুদীর্ঘ বাক্যাবলী, অনুপ্রাস, শ্লেষ, উপনা, রূপক, অতিশয়োকি প্রভৃতি অজস্র অলংকালের গুরুভারে প্রপীড়িত তার বাক্যাবলী অতিশয় রমনীয় হয়ে উঠেছে।

কাদম্বরীতে বিভিন্ন কাহিনীর পরিবেসন

কাদম্বরীতে নায়ক নায়িকার বিভিন্ন জগতের কীর্তি কাহিনী একটি সুকের মুখে সন্নিবেশিত হয়ে সে কাহিনী সুত্র উদ্ধার করে যাদুকরের সত্ত তিনি আখ্যানের মধ্যে উপাখ্যান এবং তার মধ্যে আবার অপর কাহিনী অপূর্ব কৌশলে মূল কাহিনীর সঙ্গে নানা উপাখ্যান গেঁথেছেন। এইরূপ পরিবেশনে তার কুশলতা সত্য ও নিপুন। আবার প্রকৃতিকে কবি যেন প্রানভয়ে দেখেছেন।

সমালোচনা

বানভট্টের কাব্যে বিশাল পদাবলী ও সুদীর্ঘ বাক্যরাজি পাঠে আমাদের ক্লান্তি আসেন। তৃগতের বিভিন্ন জিনিসের বর্ননা তিনি সুনিপুন ভাবে করেছেন। নানা পুরাকাহিনী এবং বিভিন্ন শাস্ত্রের জ্ঞানের প্রকাশও তার রচনায় দেখা যায়।

বানের গদ্যরচনায় সূক্ষ নিরীক্ষন পদ্ধতির চমৎকার বর্ননা প্রনালী, অক্ষর শব্দরাশির তথা কল্পনা প্রসূত ঘটনার অবতারনা বিশেষ করে লক্ষ্য করার মতো এ সকল বৈশিষ্ট্য একসাথে অন্য কারোর রচনায় পাওয়া যায় না।

যদি কোন কবি কাব্যরচনার ইচ্ছা করেন তাহলে তাঁদের ব্যবহৃত অলংকারাদি উচ্ছিষ্টই হবে। কখনই বানভট্টের ব্যবহার করা অলংকারাদি ছাড়া অপর উৎকৃষ্ট পর্যায়ের কিছু ব্যবহার করতে তাঁরা পারবেন না। কবির এরূপ বিপুল জ্ঞান ভান্ডারের কথা চিন্তা করেই বলা হয়েছে

‘বাণোছিষ্টং জগৎ সর্বম্।’

ধর্মদাস বানের প্রশংসা করে বলেছেন-

‘রুচির স্বরবর্নপদা রসভাববতী জননমনুহরতি’।

আর্য সপ্তসতী কাব্যের রচয়িতা গোবর্ধনাচার্য বলেছেন

‘‘বাগদেবী সরস্বতী বানরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।’’

বাণভট্ট সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাস্য (FAQ)

কাদম্বরী গ্রন্থের রচয়িতা কে ?

কাদম্বরী গ্রন্থের রচয়িতা হলেন বানভট্ট ।

কাদম্বরী কাব্যের নায়ক নায়িকা কে ?

কাদম্বরীর কাব্যের নায়ক চন্দ্রাপীড় ও কাদম্বরীর কাব্যের নায়িকা কাদম্বরী ।

আরো পড়ুন – কাদম্বরী সম্পর্কে পোস্টগুলি

Comments