ভট্টোজি দীক্ষিতের সিদ্ধান্তকৌমুদী কে অবলম্বন করে একটি প্রবন্ধ লেখো।
সিদ্ধান্তকৌমুদী
ভূমিকা:- ভট্টোজি দীক্ষিতের ‘ বৈয়াকরণ সিদ্ধান্তকৌমুদী ‘ নামক গ্রন্থটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। বর্তমানকালে সারা ভারতবর্ষে এই গ্রন্থটিকেই অবলম্বন করে মূলতঃ পানিণীয় ব্যাকরণের পঠন – পাঠন চলছে।
ভট্টোজি দীক্ষিতের বংশপরিচয়:-
‘ সিদ্ধান্তকৌমুদী’ র গ্রন্থকার ভট্টোজি দীক্ষিত একজন মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর পিতার নাম লক্ষ্মীধর এবং ভ্রাতার নাম রঙ্গোজি ভট্ট। রঙ্গোজি ভট্টের পুত্র হলেন কৌন্তভট্ট এবং ভট্টোজির দুই পুত্রের নাম ভানুজি দীক্ষিত এবং বীরেশ্বর দীক্ষিত। বীরেশ্বল দীক্ষিতের পুত্র হরি দীক্ষিতের শিষ্য নাগেশচার্য বা নাগোজিভট্ট। ভট্টোজির বংশবৃক্ষটিকে তাই এইভাবে দেখানো যেতে পারে-
লক্ষ্মীধর (পিতা)
|
রঙ্গোজি ভট্ট (ভ্রাতা) ভট্টোজি
| দীক্ষিত
কৌন্ডভট্ট(পুত্র) |
|
i)ভানুজি দীক্ষিত
ii)বীরেশ্বর দীক্ষিত
|
হরিদীক্ষিত
|
নাগেশ(শিষ্য)
ভট্টোজি দীক্ষিতের সময়কাল:-
ভট্টোজি দীক্ষিতের সময়কাল সম্পর্কে একেবারে সঠিকভাবে কিছু বলা না গেলেও মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, তিনি খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের মধ্যে বর্তমান ছিলেন।
ভট্টোজি দীক্ষিতের শিক্ষা:-
ভট্টোজি দীক্ষিত বিভিন্ন গুরুর কাছে বিদ্যালাভ করেছিলেন। যেমন- অপ্পয় দীক্ষিত, শেষশ্রীকৃষ্ণ প্রভৃতি। এদের মধ্যে শেষশ্রীকৃষ্ণের কাছেই তিনি ব্যাকরণশাস্ত্রে পাঠ নেন।
পন্ডিত যুধিষ্ঠিরের মীমাংসকের মতে, মনে হয় অতি বুদ্ধি বয়সে শেষশ্রীকৃষ্ণ কাশীধামে ভট্টোজিকে ব্যাকরণ পড়িয়েছিলেন।
সিদ্ধান্তকৌমুদীর বৈশিষ্ট্য:-
ভট্টোজি দীক্ষিতের ‘সিদ্ধান্তকৌমুদী’ ই হল পানিণীয় প্রক্রিয়াগ্রন্থগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ রচনা।
এই গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য হল-
- i) এটি পানিণীয় সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ ও সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াগ্রন্থ।
- ii) মহর্ষি পানিনির ‘অষ্টাধায়ী‘ সূত্রপাঠের সমস্ত সূত্রেই এখানে স্থান পেয়েছে।
- iii) ধাতু পাঠ, গনপাঠ, উনাদিপাঠ, লিঙ্গানুশাসন- প্রভৃতি ‘খিলপাঠ’ কে ভট্টোজি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং এর ফলে গ্রন্থটি যথাসম্ভব সম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে।
- iv) পানিণীয় সূত্রটির উপর বৃত্তি রচনা করেছেন এবং সেই বৃত্তি অংশে সূত্রের মর্মার্থ উপস্থাপিত করেছেন।
- v) মহাভাষ্য কাশিকা প্রক্রিয়াকৌমুদি প্রভৃতি পূর্ববর্তী গ্রন্থগুলির অভিমতও বিভিন্ন স্থানে পর্যালোচনা করে নিজের সিদ্ধান্তটি স্থাপন করেছেন। বস্তুতঃ এই কারনেই ‘বৈয়াকরণসিদ্ধান্তকৌমুদী’ নামটি স্বার্থক হয়েছে।
- vi) কাশিকাকার, প্রক্রিয়াকৌমুদীকার, প্রসাদকার, প্রকাশকার প্রভৃতির অভিমত যেসব স্থানে খন্ডিত হয়েছে, সেখানে তিনি যুক্তি দেখাতে কসুর করেননি।
- vii) এই গ্রন্থে বিশেষভাবে ত্রিমুনিব্যাকরণ -কে অনুসরন করা হয়েছে এবং মুনিত্রয়ের মধ্যে আবার ‘যথোত্তরং মুনীনাং প্রামান্যম্’ নীতি মেনে চলা হয়েছে।
- viii) বৈদিক প্রক্রিয়া এবং লৌকিক প্রক্রিয়া উভয়ই স্থান করেছে।
- ix) সর্বোপরি পৌঢ়মনোরমা নামক টীকাটির কথা সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। পৌঢ়মনোরমা নামক টীকাটির কথা সর্বাগ্রে উল্লেগযোগ্য। পৌঢ়মনোরমা রচনা করে ভট্টোজি নিজের বক্তব্যকে যেমন সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছেন, তেমনি গ্রন্থটিকেও সম্পূর্ণ করে তুলেছেন। বৈয়াকরণদের ভাষায় প্রক্রিয়া এবং পরিস্কার দুটি দিকেই তিনি দৃষ্টিপাত করেছেন।
সিদ্ধান্তকৌমুদীর টীকাসমূহ:-
এই গ্রন্থের উপর অনেক টীকা ব্যাখ্যাদি রচিত হয়েছে। এদের মধ্যে ভট্টোজির নিজের রচিত পৌঢ়মনোরমা নামক টীকাটি কথা সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া নাগেশ ‘বৃহচ্ছব্দেন্দুশেখর ‘ এবং ‘ লঘুশব্দেন্দুশেখর’ নামে আরও দুটি টীকা লিখেছেন সিদ্ধান্তকৌমুদী-র ওপরে। বারানসী ধামের প্রখ্যাত বৈয়াকরণ ড.সীতারাম শাস্ত্রীর সম্পাদনায় সমগ্র পৌঢ়মনোরমা (বৃহচ্ছব্দরত্নসহ) এবং বৃহচ্ছব্দেন্দুশেখর প্রকাশিত হয়েছে বারানসী থেকে। সিদ্ধান্তকৌমুদী-র আরও উল্লেখযোগ্য টীকার মধ্যে জ্ঞানেন্দ্র সরস্বতীর তত্ত্ববোধিনী ও বাসুদেবের বালমনোরমা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বস্তুতঃ সিদ্ধান্তকৌমুদী -র ওপর প্রায় ২৪/২৫ খানি টীকার সন্ধান পাওয়া গেছে, সবগুলি এখনও প্রকাশিত হয়নি।
সিদ্ধান্তকৌমুদীর জনপ্রিয়তা:-
টীকা-টীপ্পনীয় সংখ্যা দেখলেই সিদ্ধান্তকৌমুদী-র জনপ্রিয়তা বোঝা যায়। আসলে ভট্টোজি দীক্ষিতের সিদ্ধান্তকৌমুদী-কে ঘিরে যেন একটা সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল।
সিদ্ধান্তকৌমুদীর ওপর রচিত সারসংক্ষেপ :-
সিদ্ধান্তকৌমুদী-র কয়েকটি সারসংক্ষেপ রচিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে বরদরাজের লঘুসিদ্ধান্তকৌমুদী, মধ্যসিদ্ধান্তকৌমুদী এবং সারসিদ্ধান্তকৌমুদী বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে লঘুসিদ্ধান্তকৌমুদী -র পঠন-পাঠন ও জনপ্রিয়তা বেশি। বরদরাজকে কেউ কেউ ভট্টোজির শিষ্য বলেও উল্লেখ করেছেন।
সিদ্ধান্তকৌমুদীর মূল্যায়ন:-
পানিণীয় সম্প্রদায়ের প্রক্রিয়া গ্রন্থগুলি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, তবে সিদ্ধান্তকৌমুদী -র জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি। আধুনিকযুগে স্বামী বিরাজনন্দ ও স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী পুনরায় অষ্টাধায়ী- সূত্রক্রমের ওপর জোর দিলেও ‘সিদ্ধান্তকৌমুদী’-র জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়নি।