বানভট্টকে অনুসরন করে মহাশ্বেতার রূপবর্ণনা কর । Follow Banbhatta and describe the form of Mahasweta বানভট্টকে অনুসরন করে মহাশ্বেতার রূপবর্ণনা কর
মহাশ্বেতার রূপ বর্ণনা ভূমিকা
উঃ- চন্দ্রাপীড় এক সিদ্ধায়তনে এসে দেখতে পেল শিবের দক্ষিণ মুখের মুখোমুখি হয়ে পদ্মাসনে বসে আছে একটি মেয়ে তার দেহের জ্যোতি দিগদিগন্ত ভরিয়ে দিয়েছে, প্রলয়কালে উদ্বেলিত ক্ষীরোদসাগরের প্রবাহের মত সাদা,যেন অনেক দিনের জমানো তপস্যা যেন ত্রিপদগামিনী গঙ্গা এক জায়গায় জমা হয়ে গাছের ফাঁক দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তার দেহের কান্তিতে যেন পর্বত বন সহ সমস্ত অঞ্চল টা চন্দ্রময় হয়ে গেছে। যে ওই মেয়েটিকে দেখবে কারণ চোখের ভিতর দিয়ে মরমে পশে মনটাকে সাদা করে দেবে।
অতিধবল প্রভা দিয়ে তার দেহ খানি ঢাকা থাকায় অঙ্গ পতঙ্গ গুলি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না মনে হচ্ছে যেন সে স্ফটিকের ঘরে বসে আছে যেন দুধ মেশানো জলে ডুবে রয়েছে যেন পরিষ্কার চিনা রেশমের কাপড় ঢাকা আছে যেন আয়নায় পোড়া ছায়া যেন শরতের একরাশ মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে-
“অন্যথৈব ধবলয়ন্তীং কৈলাসগিরিম্, অন্তর্দ্রষ্টুরপি লোচন পথ প্রবিষ্টেন শ্বেতিমানমিব।মনোনয়ন্তীং, অতিধবল প্রভা পরিগত দেহতয়া স্ফটিকগৃহগতামিব দুগ্ধলিলমগ্নামিব বিচলচীনাং শুকান্তরিতামিব আদর্শতল সংক্রান্তামিব শরদভ্র পটলতিরস্কৃতামিব অপরিস্ফূট বিভাব্যমানাবয়বাম্।”
বিধাতা শরীর তৈরি করার জন্য পঞ্চভূতের সমস্ত দ্রব্য বাদ দিয়ে যেন কেবল ধবলগুন দিয়ে তৈরি করেছেন সে যেন দক্ষের যজ্ঞক্রিয়া,শিবের উদ্ধত প্রমথরা পাছে চুল ধরে টেনে নিয়ে যায় সেই ভয়ে শিবের শরন নিয়েছে-
“পঞ্চমহাভূতময়মপহায় দ্রব্যাত্মকম্ অঙ্গনিষ্পাদনোপকরনকলাপং ধবলগুনেনেব কেবলনোৎপাদিতাং দক্ষাধ্বরক্রিয়ামিবোদ্ধতগন কচগ্রহ ভয়োপসেবিত ত্রাম্বকাম্।”
যেন পশুপতি ইচ্ছাতে ঐরাবতের শরীরের ক্লান্তি নিয়ে এসেছে ভস্মলিপ্ত রুদ্রের দেহচ্ছবি যেন মূর্তি ধারন করেছে। শিবের গলার নীলবর্নরুপ অন্ধকারকে মুছে ফেলার জন্য যেন জ্যোৎস্না এসেছে পার্বতীর মনের পবিত্রতার যেন শরীর ধারণ করেছে কার্তিকের ব্রহ্মচর্য ব্রত যেন মূর্তি ধরেছে শিবের ষাঁড়টির দেহদ্যুতি যেন আলাদাভাবে রয়েছে সেখানকার ফুলগুলি যেন শিব পূজা করতে উদ্যত হয়েছে। যেন ব্রহ্মার তপঃসিদ্ধি পৃথিবীতে নেমে এসেছে যেন সত্যযুগের প্রজাপতিদের কীর্তি সপ্তলোক ঘুরে ঘুরে পরিশ্রান্ত হয়ে এখানে বিশ্রাম নিচ্ছে।
বেদ বিদ্যা যেন কলিযুগে ধর্মের বিনাশ দেখে শোকে বনবাস নিয়েছে। যেন আগামী সত্যযুগের বীজ নারীরূপে রয়েছে যেন শ্বেতদ্বীপের শোভা অন্যদ্বীপগুলি দেখতে এসেছে।
যেন ফোটা কাশফুলের শোভা শরৎকালের প্রতীক্ষা করছে শেষ নাগের শোভা যেন পাতাল থেকে বেরিয়ে এসেছে শুক্লপক্ষ গুলিকে যেন এক জায়গায় জড়ো করা হয়েছে- সমস্ত হাঁস যেন নিজেদের ধবল গুণ তাকে ভাগ করে দিয়েছে-
" কাশকুসুমবিকাশকান্তিমিব শরৎসময়মুদীক্ষমানাম্, শেষ শরীরচ্ছায়ামিব রসাতলম্, অপহায় নির্গতাম্, মুষলায়ুধ দেহ প্রভামিব মধু মদ বিঘূর্ণনায়াস বিগলিতাম্, শুক্লপক্ষপরম্পরামিব পুঞনজীকৃতাম্, সর্বহংসৈরিব ধবলতয়া কৃত সংবিভাগাম্।।''
সে যেন ধর্মের হৃদয় থেকে বেরিয়ে এসেছে যেন শাঁখকে খোদাই করে তাকে বার করা হয়েছে কিংবা টেনে আনা হয়েছে মুক্তা থেকে। তার অবয়বগুলি যেন মৃণাল দিয়ে গড়া সে যেন গজদন্তের কুচি দিয়ে তৈরি,যেন জ্যোৎস্নার তুলি দিয়ে ধোওয়া, চুনের গোলা দিয়ে লেপা, তাকে যেন অমৃতের ফেনাকুঞ্জ দিয়ে সাদা করা হয়েছে, যেন পারার রসে ধোয়া, গলানো রূপো দিয়ে যেন মাজা, কিংবা চন্দ্র মন্ডল থেকে কুঁদে দিয়ে বার করা, যেন কুর্চি, কুন্দ, নিসিন্দা ফুলে সাজান।
বিদ্যুতের তরল তেজের মতো কাঁধ পর্যন্ত ঝোলা তামাটে রঙের জোটায় তার মাথা দিয়ে ঢাকা স্নান করায় জটাগুলিতে বিন্দু বিন্দু জল লেগে ছিল যেন সেই অবস্থায় প্রণাম করার সময় মাথায় লেগেছে শিবেরচরণ ভস্মরেনু।
আবার মাথায় জটা দিয়ে বেঁধে রেখেছে শিবের নাম লেখা শিবের মণিময় দুখানি পাদুকা। সে অতুলনীয় ভক্তিতে শিবের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে মনে হচ্ছে যেন আরেকটি শ্বেতপদ্মের মালা দিয়ে শিবের পূজা করছে।
সে অনবরত গান করে চলেছে তাই ঠোঁট দুটি কাঁপায় তার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে তার শুদ্ধ মনের আলোয রাশির মতো উজ্জল দাঁতের দ্যুতি।তার স্তবক গানের স্বরলহরী যেন গৌরীপতিকে আবার স্নান করাচ্ছে তার গলায় আছে আমলকি ফলের মতো বড়-বড় মুক্তার জপমালা সেগুলো যেন সাক্ষাৎ ব্রহ্মার মুখ থেকে টেনে আনা বেদের অর্থ পরপর গাথা গায়ত্রী মন্ত্রের অক্ষরনিচয় অথবা যেন নারায়ণের নাভিপদ্ম থেকে তুলে আনা বীজ তার হাতের ছোঁয়ায় নিজের পবিত্র করার ইচ্ছাই যেন সপ্তর্ষিরাই নক্ষত্র রূপে এসেছেন।
মোক্ষপুর দ্বারের দুটি কলস এর মত দুটি স্তন দ্বারা দুটি হাঁসযুক্ত গঙ্গার মতো তাকে দেখাচ্ছে।
বুকের মাঝে বাঁধা আছে দুর্গার সিংহের কেশর দিয়ে তৈরি চামরের মতো কল্পতরুর বল্কল। তার শরীরটিকে পবিত্র করেছে একটি গোল করা পৈতে। তার শরীর সাদা সূক্ষ্ম বস্ত্র আবৃত থাকলেও পদ্মাসনে বসার জন্য পায়ের তলার লাল রং এর প্রভায় কাপড়খানি যেন লাল হয়ে গেছে।
যোগ্য সময়ে যৌবন উপস্থিত হলেও তার মধ্যে কোনরূপ কামাদি বিকার নেই-
” যৌবনেনপি স্বকালোপর্সিনা নির্ধিকার বিনীতেন শিষ্যেণেবোপাস্যমানাম্”।
মহাশ্বেতার রূপ বর্ণনা (অন্তিম পর্ব )
তার শরীরের রূপ-লাবণ্য যেন পূর্ণ অর্জন করে নির্মূল হয়ে তার শরীরকে আশ্রয় করেছে সে নিজের মেয়ের মতো কোলে নিয়ে একটি গজদন্তের বিনা ডান হাতে বাজাচ্ছে।
তার মণিবন্ধে থাকা শাঁখা এবং নখের কিরণে দীর্ঘ ডান হাতটি দিয়ে বীনাবাদনের জন্য হাতির দাঁতের ছড়িটি ধরায় যেন সাক্ষাৎ গান্ধর্ব বিদ্যা বিরাজ করছে।বীণার ধ্বনির সঙ্গে কণ্ঠসঙ্গীত মিশিয়ে সে ভগবান মহাদেবের স্তবগান করছে সেই গানটি গলার হারের মতো তার কন্ঠ সংলগ্ন ছিল, গ্রহচক্র যেমন ধ্রুব নক্ষত্রযুক্ত থাকে সেই গানটি ও তেমন ধ্রুব সংযুক্ত এবং ক্রুদ্ধা রমনীর মুখ যেমন রক্তবর্ণ হয সেই গানটিতেও তেমন মুখ থেকে নানাবিধ রাগ-রাগিনী যুক্ত অক্ষর উচ্চারিত হচ্ছে
পাগলিনী রমণী যেমন বহুতর করতল ধ্বনি করে সেই গানেও তেমন বহুতর তাল আছে এবং মীমাংসা দর্শন যেমন শাব্দী ও আর্থী নামে দুই প্রকার ভাবনা বিশিষ্ট সেই গানটিও বহুতর মূর্চ্ছনাবিশিষ্ট। তার সেই মধুর সংগীতের আকৃষ্ট হয়ে বনের হরিণ বানর হাতি সিংহ দাঁড়িয়ে কান খাড়া করে শুনছে এবং যেন ধ্যান অভ্যাস করছে –
” অতিমধুর গীতাবকৃষ্টৈর্ধ্যানামিবাভ্যস্যদ্ভির্নিশ্চল কর্ণ পুটৈর্মৃগ বরাহ বানর শরভ সিংহ প্রভৃতির্বচনচরৈরাবদ্ধমন্ডলৈরাকর্ন্যমানগীতানুবিদ্ধ বিপঞ্চী ঘুষাম্…..”।
সেই মেয়েটিকে মনে হচ্ছে যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে আকাশগঙ্গা অপ্রাকৃত শিবের সরের মত তেজোময়ী।
তার কোন তৃষ্ণা অর্থাৎ কামনা-বাসনা নেই আসক্তি নেই তার মধ্যে আছে গভীর প্রসন্নতা সীতা যেমন অগ্নিতে প্রবেশ করেছিলেন
এই কন্যাও পরমজ্যোতির মধ্যে প্রবেশ করেছে পৃথিবী যেমন জলে পরিবেষ্টিতা সেও তেমন জলপানে দেহ ধারন করে থাকে শীতকালের সকালের শোভা যেমন সূর্যের আলোক আবৃত করে
সেও তেমন শরীরে সূর্যের আলো ধারণ করেছে।তেজোময় দেবী যেমন শরীরের কান্তি দ্বারা ভূতল করেন সেও তেমনি শরীরের প্রতিবিম্ব দ্বারা ভূতল লিপ্ত করেছে তার মমত্ববোধ নেই অহংকার নেই বিদ্বেষ নেই আছে অমানুষী আকৃতি।
স্বর্গীয় বলে তার বয়সের যথার্থ পরিমাণ জানতে না পারলেও তাকে 18 বছরের থেকে কিছু কম বয়স্ক বলে মনে হয় এবং সে শিবের উপাসনা রূপ ব্রত অবলম্বন করেছে এমন মেয়েটিকে চন্দ্রাপীড় দেখেছিল-
“অংশুময়ীমিব তচ্ছায়ানুলিপ্ত ভূতলাম্, নির্মমাম্, নিরহঙ্কারাম্,নির্মৎসরাম্, অমানুষাকৃতি,দিব্যত্বাদপরিজ্ঞায়মান বয়ঃ পরিমানাম্, অপ্যষ্টাদশবর্ষদেশীয়ামিবোপলমানাম্, প্রতিপন্নপাশুপতব্রতাং কন্যকাং দদর্শ।”
আরো পড়ুন – কাদম্বরী সম্পর্কে পোস্টগুলি
- কাদম্বরী: শুকনাসোপদেশঃ( সংস্কৃত ব্যাখ্যা)
- কাদম্বরী: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- ‘কাদম্বরী’ কথা না আখ্যায়িকা
- কাদম্বরী: চন্দ্রাপীড়ের প্রতি শুকনাসের উপাদেশাবলী
- বানভট্টকে অনুসরন করে মহাশ্বেতার রূপ বর্ণনা কর
- বাণভট্ট রচিত কাদম্বরী কথা না আখ্যায়িকা আলোচনা কর
- বানোচ্ছিষ্টং জগৎ সর্বম্ – ব্যাখ্যা কর
- বাণোছিষ্টং জগৎ সর্বম্- কাদম্বরী পাঠ্যাংশের অনুসারে বর্ননা