যাজ্ঞবল্ক‍্যসংহিতা: ব‍্যবহারাধ‍্যায় – সাধারন ব‍্যবহার মাতৃকা প্রকরণম্ ব‍্যাখ‍্যা-5

যাজ্ঞবল্ক‍্যসংহিতা ব‍্যবহারাধ‍্যায় সাধারন ব‍্যবহার মাতৃকা প্রকরণম্ ব‍্যাখ‍্যা -5

যাজ্ঞবল্ক‍্যসংহিতা ব‍্যবহারাধ‍্যায় সাধারন ব‍্যবহার মাতৃকা প্রকরণম্ ব‍্যাখ‍্যা -5

স্মৃত‍্যোর্বিরোধে ন‍্যায়স্তু বলবান্ ব‍্যবহারতঃ।
অর্থশাস্ত্রাৎ তু বলবদ্ ধর্মশাস্ত্রমিতি স্থিতিঃ।।

অনুবাদ:-

স্মৃতিশাস্ত্র দুটির বচনে পরস্পর বিরোধ দেখা দিলে বৃদ্ধ ব‍্যবহার অনুসারে সামান‍্য বিশেষ ন‍্যায় বলবান্ হবে। কিন্তু অর্থশাস্ত্র ও ধর্মশাস্ত্রের মধ‍্যে বিরোধ দেখা দিলে ধর্মশাস্ত্রই বলবত্তর গণ‍্য হবে।

উৎস:-

আলোচ‍্য শ্লোকটি যোগীশ্বর যাজ্ঞবল্ক‍্য রচিত সংহিতার ব‍্যবহারাধ‍্যায়ের অন্তর্গত অসাধারন ব‍্যবহার মাতৃকা প্রকরণ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে।

প্রসঙ্গ

স্মৃতিশাস্ত্রের মধ‍্যে যে সমস্ত বিধান দেওয়া হয়েছে সেই বিধানগুলির মধ‍্যে যদি দুটি বিধানের মধ‍্যে পরস্পর বিরোধ সৃষ্টি হয় সেই সময় কি কর্তব‍্য সে বিষয়ে সমাধান করতে গিয়ে যাজ্ঞবল্ক‍্য এই শ্লোকটির অবতারনা করেছেন।

ব‍্যাখ‍্যা

স্মৃতিশাস্ত্রোক্ত দুটি বিধান যদি পরস্পর বিরোধী হয় তা হলে কোনটি উৎসর্গবিধি ও কোনটি অপবাদ বিধি তা বিচার করে বিরোধ পরিহারের জন‍্য বৃদ্ধব‍্যবহার অর্থাৎ জ্ঞানীগুনীজনের আচরিত পথ অনুসরন করে চলার উপদেশ দিয়েছেন আচার্য যাজ্ঞবল্ক‍্য। মিতাক্ষরা টীকাকার বিজ্ঞানেশ্বর দৃষ্টান্ত দ্বারা বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। যেমন-

“নিহ্নুতে লিখিতং নৈকম্ একদেশে বিভাবিতঃ।
দাপ‍্যঃ সর্বং নৃপেণার্থং ন গ্রাহ‍্যস্ত্বনিবেদিতঃ।।”

অর্থাৎ প্রত‍্যর্থী যদি লিখিত অভিযোগগুলো অস্বীকার করে এবং অর্থী যদি ঐ অভিযোগগুলির একাংশও সাক্ষী প্রভৃতির দ্বারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয় তা হলে রাজা অর্থীর অভিযোগের সকল দ্রব‍্যই প্রত‍্যর্থীকে দিয়ে দেওয়াবেন। কারণ, অভিযোগের একাংশও সত‍্য হলে অবশিষ্টাংশ সত‍্য বলে ধরে নিতে হবে, এটা স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু ভাষাকালে যে বিষয় বলা হয়নি পরে তা বললে সেটিগ্রাহ‍্য হবে না। এটি একটি স্মৃতিশাস্ত্রের বিধান।

বহু বিষয়ে অভিযোগ থাকলে অর্থী সাক্ষী প্রভৃতির দ্বারা যেটুকু অংশ প্রমাণ করতে পারবে ততটুকু সে পাবে। পিতৃঋনের ক্ষেত্রে অধমণের পুত্রাদি যদি বহু বিষয়ে অভিযুক্ত হয়ে জানিনা  বলে তাহলে কিন্তু তারা মিথ‍্যাবাদী হয় না। এবং অভিযোগের একাংশ সত‍্য প্রমাণিত হলে অভিযোগের সম্পূর্ণাংশ রাজা দেওয়াবেন না। এটিও একটি স্মৃতিশাস্ত্রের বিধান।

অর্থশাস্ত্র এবং ধর্মশাস্ত্র উভয়ের মধ‍্যেও যদি বিরোধ দেখা যায় তাহলে সেখানে ধর্ম শাস্ত্রের প্রাধান‍্যই বলবৎ হবে। কারণ আচার্য যাজ্ঞবল্ক‍্য ব‍্যবহারাধ‍্যায়ের শুরুতেই বলেছেন- “ব‍্যবহারান্ নৃপঃ পশ‍্যেৎ….ধর্মশাস্ত্রানুসারেণ” ইত‍্যাদি। অর্থাৎ রাজা ধর্মশাস্ত্রানুসারেই  প্রজাপালন করবেন। এটাই তার পরমধর্ম। যেমন- চতুষ্পাদ ব‍্যবহার প্রবর্ত্তণের সময় রাজা যদি দেখেন একজনের জয় হলে মিত্রলাভ হবে বটে তবে ধর্মশাস্ত্র অনুসৃত হবে না আর অন‍্যজনের জয় হলে ধর্মশাস্ত্র অনুসৃত  হবে মিত্রলাভ হবে না। আবার অন‍্যদিকে অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে সুবর্ণ, ভূমিলাভাদি অপেক্ষা মিত্রলাভই শ্রেয়ঃ। তাই রাজার মিত্রপ্রাপ্তির চেষ্টা করা উচিত। এরূপ অবস্থায় রাজা ধর্মশাস্ত্র অনুসরন করে বিচারের রায় দেবেন। কারন অর্থশাস্ত্র অপেক্ষা ধর্মশাস্ত্রই বলবান্।

এটাই হল শ্লোকটির অর্থ।

Comments