ধ্বনিসূত্র কাকে বলে? গ্রাসম‍্যানের ধ্বনিসূত্র আলোচনা

ধ্বনিসূত্র কাকে বলে? গ্রাসম‍্যানের ধ্বনিসূত্র আলোচনা করা হল।

ধ্বনিসূত্র কাকে বলে? গ্রাসম‍্যানের ধ্বনিসূত্র আলোচনা কর

উ:- একটি ভাষার সমস্ত ধ্বনিগুলি ঐতিহাসিক যুগ থেকে কখনোই একরকম থাকে না, নিত্যই ভাষার মধ্যে ধ্বনিগত ও রূপগত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।

    ভাষা যেহেতু সম্প্রদায় ক্রমে এবং বংশ-পরম্পরায় ব্যবহৃত হয় তাই শব্দ গঠনে ধ্বনির উচ্চারণে এবং বাক্-বিন্যাসে ভাষার মধ্যে আছে নানা পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের কারণ হলো প্রধানত-

  • i)উচ্চারণের অনুকরণ।
  • ii) বিশেষ স্বর বা acecent এর প্রতি ঝোঁক।
  • iii) সাদৃশ্য।

    এই ধ্বনি পরিবর্তনের প্রকৃতিও দুই ধরনের-

  • i) নিয়মিত ধ্বনি পরিবর্তন:-  যাহা ধ্বনি তাত্ত্বিক সূত্র দ্বারা চালিত হয়।
  • ii)অনিয়মিত ধ্বনি পরিবর্তন :- এটি কোন নির্দিষ্ট নিয়মে হয় না।  তাই একে বলা হয় ধ্বনিতাত্ত্বিক প্রবণতা।(phonatic  tendency)

         যখন কোন একটি ভাষার ধ্বনিগুলি নিয়মিতভাবে সেই ভাষা গোষ্ঠীর সমগোত্রীয় অন্যান্য ভাষা গুলির মধ্যেও ধনী পরিবর্তন ঘটায় তখন সেই ধ্বনি পরিবর্তনের নিয়মকে ধ্বনি পরিবর্তনের সূত্র বলা হয়।  (phonatic law)

গ্রাসম‍্যানের ধ্বনিসূত্র (Grossman law) (গ্রাসমানের আইন) আলোচনা

সংস্কৃত ভাষাতত্ত্বের ক্ষেত্রে গ্রাসম্যানের আইনের উপযোগিতা অপরিসীম। কার্ল ভার্নারের ধ্বনিসূত্রে যে সমস্ত ব‍্যতিক্রম গুলি ছিল সেগুলির সমাধান করে গ্রাসম্যান একটি নতুন ধ্বনিসূত্র প্রনয়ণ করেন। এই ধ্বনিসূত্র অনুসারে ইন্দো- ইউরোপীয় মূল ভাষার পাশাপাশি দুটি অক্ষরে দুটি মহাপ্রাণ বর্ণ থাকলে গ্রীক ইন্দো-ইরানীয় এবং ভারতীয় আর্যভাষা বা সংস্কৃতে তাদের মধ্যে সাধারণত প্রথমটি অল্পপ্রাণ বর্ণে পরিণত হয়। সংস্কৃতে ঘোষবর্ণ স্পর্শ বর্ণে এবং গ্রীক ভাষায় অঘোষ বর্ণ স্পর্শবর্ণে পরিণত হবে। যেক্ষেত্রে প্রথমটি মহাপ্রাণ বর্ণরূপে বিবর্তিত সেখানে দ্বিতীয় মহাপ্রাণ বর্ণটি অবশ্যই অল্পপ্রাণ বর্ণে পরিবর্তিত হবে। এই হল গ্রাসম‍্যানের সূত্র।

গ্রাসম‍্যানের ধ্বনিসূত্র আবিষ্কারের ফল

গ্রাসম‍্যানের ধ্বনিসূত্রটি প্রধানত গ্রীক ও সংস্কৃত ভাষার ধ্বনি পরিবর্তনের ক্ষেত্রেই বিশেষ প্রযোজ্য। গ্রাসম‍্যানের ধ্বনিসূত্র আবিষ্কারের ফলে সংস্কৃত ও I.E ভাষায় মধ্যে একটি নতুন সম্পর্ক দেখা দিল।

  যেমন- I.E * bhendh > সংস্কৃত bandh, গ্রীক penth > eng bind, গ্রথিক (জার্মান) bindan – এই সমীকরণ অনুযায়ী মূল ইন্দো- ইউরোপীয় ভাষায় শব্দটি হওয়া উচিত * bendh, 

কিন্তু জার্মানি ভাষায় b তে p তে পরিণত হওয়া উচিত। আসল কথা এক্ষেত্রে সংস্কৃত b এবং মূল ভাষার ভিন্ন *b ভিন্ন নয়। মূল I.E  ভাষায় শব্দটি ছিল *bhendh, মূল ভাষার *bh  জার্মানিতে তাই bতে পরিণত হয়েছে।

উদাহরণ :- bhendh জার্মানীতে bindan.

   মূল ভাষার যে *bh ছিল তার প্রধান সংস্কৃত নিজেই। উদাহরণ:-
সংস্কৃত√বন্ধ > √ অভান্তসীৎ
সংস্কৃত √ বুধ্ > √ ভোৎস‍্যতি।
সংস্কৃত √ দুহ্ > √ অধুক্ষৎ।

   গ্রীক সম্বন্ধেও এই নিয়ম। অবশ্য গ্রীক ভাষায় বিষমীভবনের পূর্বে ঘোষ বর্ণ অঘোষ বর্ণে পরিণত হয়। তারপর অল্পপ্রাণ বর্ণ হয়।  সুতরাং ভ্>ফ্>প্ এই ক্রমে গ্রীকে ধ্বনি পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সুতরাং
উদাহরণ:- I.E* bhendh > phenth.

      ইন্দো ইউরোপীয় ভাষার শব্দ সংস্কৃত ভাষায় পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে সংস্কৃত শব্দের প্রথম অক্ষরের মহাপ্রাণ ভ> ব তে পরিণত হয়। উদাহরণ- I.E Bhendh > সংস্কৃত bandh.

    জার্মানীতেও সঘোষ  অল্পপ্রাণ বর্ণ সঘোষ মহাপ্রাণ বর্ণে পরিণত হয়।  অর্থাৎ চতুর্থ বর্ণ তৃতীয় বর্ণে পরিণত হয়।

উদাহরণ:- I.E- bhendh > জার্মানী bindan.

    সংস্কৃত ভাষায় বিভিন্ন ধাতু থেকে ক্রিয়াপদ নির্মাণের সময়ে আক্ষরিক দ্বিরুক্তি বা(reduplication)  এর ক্ষেত্রে গ্রাসম্যানের সূত্রটি বিশেষ প্রযোজ্য হয় অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে সঘোষ মহাপ্রাণ সঘোষ অল্পপ্রাণে অর্থাৎ চতুর্থ বর্ণ তৃতীয় বর্ণের পরিবর্তন হয়ে পুনরাবৃত্তি হয়।

যথা:- √ ভূ > বভূব
           √ ধা > দধামি।

গ্রাসম‍্যানের সূত্রের ফল

   এই গ্রাসম‍্যানের ধ্বনিসূত্র দ্বারা –

  • i) সংস্কৃত ও গ্রীক ভাষার মধ্যে একটি ধ্বনিতাত্ত্বিক সমন্বয়  সাধিত হয়েছে।
  • ii) O.I.A এর আক্ষরিক দ্বিরুক্তির একটি যুক্তি সঙ্গত ব্যাখ্যা দেওয়া গেছে।
  • iii) Grimm এর সূত্রে আপাত বৈষ‍্যমের অবসান ঘটেছে।
Comments