অক্ষ সুক্ত ঋগ্বেদের দশম মন্ডল হতে সংহিতা পাঠ ও বঙ্গানুবাদ । অক্ষ সুক্তের ঋষি- ঐলুষ কবষ ঋষি অথবা মুজবৎ পুত্র অক্ষ। অক্ষ সুক্তের দেবতা- ১,৭,৯, ১২ নং শ্লোকের দেবতা অক্ষ দেবতা; ২,৪,৫,৬,৮,৯,১০,১১,১৪ কিতব এবং অক্ষা দেবতা; ১৩ নং শ্লোক কৃষিদেবতা। অক্ষ সুক্তের ছন্দ- ১,২,৩,৪,৫,৬,৮,৯,১০,১১,১২,১৩ নং শ্লোকের ছন্দ ত্রিষ্টুপ্ ছন্দ; ৭ নং শ্লোকের ছন্দ জগতী।
ঋগ্বেদসংহিতার দশমমন্ডলের ৩৪তম সূক্ত হল অক্ষসূক্ত। এই সূক্তটি ধর্মীয় কোনো আচার আচরন না থাকায় একে ধর্মনিরপেক্ষ সূক্ত বলা হয়। এই অক্ষ সূক্তের দ্বারা তৎকালীন ঋকবেদের যুগের অর্থাৎ প্রাচীন ভারতের সমাজচিত্র ফুঁটে উঠেছে।
অক্ষ সুক্ত হতে মন্ত্রগুলির সংহিতা পাঠ ও বঙ্গানুবাদ নিম্নে দেওয়া হল।
ঋগ্বেদসংহিতা: অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ
অক্ষ সুক্ত | ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের ৩৪তম সূক্ত |
অক্ষ সুক্ত ঋষি | ঐলুষ কবষ ঋষি অথবা মুজবৎ পুত্র অক্ষ |
অক্ষ সুক্ত দেবতা | ১,৭,৯, ১২ নং শ্লোকের দেবতা অক্ষ দেবতা ২,৪,৫,৬,৮,৯,১০,১১,১৪ কিতব এবং অক্ষা দেবতা ১৩ নং শ্লোক কৃষিদেবতা |
অক্ষ সুক্তের ছন্দ | ১,২,৩,৪,৫,৬,৮,৯,১০,১১,১২,১৩ নং শ্লোকের ছন্দ ত্রিষ্টুপ্ ছন্দ ৭ নং শ্লোকের ছন্দ জগতী |
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ- ১
“প্রাবেকা মা বৃহতো মাদয়ন্তি
প্রবাতেজা ইরিণে বর্বৃতানাঃ।
সোমস্যেব মৌজবতস্য ভক্ষো
বিভীদকো জাগৃবির্মহ্যমচ্ছান্।।”
বঙ্গানুবাদ:- প্রবল বাত্যাযুক্ত স্থানে (বা কালে অর্থাৎ -বর্ষাকালে ) উৎপন্ন বিশাল (বিভীদকবৃক্ষের ফলরূপ) পাশার ঘুঁটি গুলি ছকের উপরে কম্পিত অবস্থায় সঞ্চালিত হয়ে আমাকে আনন্দে উন্মত্ত করে। মূজাবান্ পর্বতে উৎপন্ন সোমলতার রসপান যেমন (আনন্দদায়ক) তেমনি উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বিভীদকবৃক্ষের কাষ্ঠ নির্মিত অক্ষ আমাকে অত্যন্ত প্রীতি দান করে।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ – ২
” ন মা মিমেথ ন জিহীল এষা
শিবা সখিভ্য উত মহ্যমাসীৎ
অক্ষস্যাহমেক পরস্য হেতো
রনুব্রতামপ জায়ামরোধম্।।”
বঙ্গানুবাদ:- আমার এই পত্নী কখনো আমার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়নি বা অনাদর প্রদর্শন করেন নি। (সায়নানুসারে) আমার নিকট লজ্জিত হয়নি। সেই পত্নী আমার বন্ধুদের (সহ খেলোয়াড় গণের ) এবং আমার প্রতি মৈত্রী ভাবনাপন্ন ছিল। কিন্তু কেবল মাত্র পাশার কারণে আমি সেই অনুরক্তা স্ত্রীকে পরিত্যাগ করেছি।
অক্ষ সুক্তসংহিতা পাঠ- ৩
“দ্বেষ্টি শ্বশ্রুরপ জায়া রুনদ্ধি
ন নাথিতো বিন্দতে মর্জিতারম্।
অশ্বস্যেব জরতো বস্ন্যস্য
নাহং বিন্দামি কিতবস্য ভোগম্।।”
বঙ্গানুবাদ:- শ্বশ্রুমাতা (কিতবের প্রতি) বিদ্বেষ বা বিরুক্তি পোষণ করেন, পত্নী (ভৎসনাপূর্বক) পরিত্যাগ করে( বিতাড়িত করে )।প্রার্থনা করেও কিতব অনুগ্রহকারী কাউকে পায় না। (এইভাবে) বৃদ্ধ একটি অশ্বের ন্যায় যার মূল্য ধার্য করা হয়েছে, তার মতো আমি কিতবরূপে কোনো উপভোগ বা সমাদর পায়না।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ- ৪
” অণ্যে জায়াং পরিমৃশন্ত্যস্য
যস্যাগৃধ দ্বেদনে বাজ্যঅক্ষঃ।
পিতা মাতা ভ্রাতর এনমান্থ
র্ন জানীমো নয়তা বদ্ধমেতম্।।”
বঙ্গানুবাদ:- যে কিতবের ধন বলবান (বা বিজয়ী) অক্ষ গ্রহণের জন্য আকাঙ্খা করে সেই কিতবের পত্নীকে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় রা (বস্ত্রকেশাদি আকর্ষণের দ্বারা ) আলিঙ্গন করে। (সেই কিতবের) পিতা-মাতা ও ভ্রাতৃগণ তার সম্বন্ধে বলে ‘আমরা একে জানিনা’ বদ্ধ অবস্থায় একে নিয়ে যাও।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ- ৫
“যদাদীধ্যে ণ দবিষাণ্যেভিঃ
পরায়দ্ভ্যোঅব হীয়ে সখিভ্যঃ।
ন্যুপ্তাশ্চ ব ভ্রবো বাচমক্রতঁ
এমীদেষাং নিষ্কৃতং জারিনীব।।”
বঙ্গানুবাদ:- আমি যখন চিন্তা পূর্বগ স্থির করি, আমি আর এই পাশা খেলা করব না। তখন (খেলার) সঙ্গীগণ অক্ষক্রীড়া ক্ষেত্রের দিকে গমন করতে থাকলে আমি তাদের থেকে দূরে সরে যাই। কিন্তু পিঙ্গলবর্ণের পাশাগুলি (ছকের উপর) নিক্ষিপ্ত হয়ে কথা বলতে (শব্দ করতে) থাকে এবং আমি স্বৈরিনী নারীর ন্যায় নিশ্চিতভাবে অক্ষক্রীড়ার স্থানে গমন করি।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ- ৬
” সভামেতি কিতবঃ পৃচ্ছমানো
জেষ্যামীতি তন্বাত শূশুজানঃ।
অক্ষাসো অস্য বি তিরন্তি কামং
প্রতিদীব্নে দধত আ কৃতানি।।”
বঙ্গানুবাদ :- দ্যুতকার আমি এবার জয়লাভ করব এরূপ চিন্তা করতে করতে সভাস্থলে (অক্ষক্রীড়াস্থলে )গমন করে। (সেখানে) অক্ষগুলি প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে দানগুলি প্রদানপূর্বক তার মনের বাসনাকে হতাশ করে। ( সায়ণের মতে – বর্ধিত করে)
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ- ৭
“অক্ষাস ইদঙ্কু শিনো নিতোদিনো
নিকৃত্বানস্ত পনাস্তা পয়িষ্ণবঃ
কুমারদেষ্ণা জয়তঃ পুনর্হণো
মধ্বা সংপৃক্তাঃ কিতবস্য বর্হণা।।”
বঙ্গানুবাদ:- অক্ষগুলি অঙ্কুশযুক্ত, বিদ্ধকারী (যন্ত্রণাদায়ক), ছেদনকারী কিতবের সন্তাপক, (বন্ধুবর্গের নিকটে পীড়াদায়ক)। যে জয়ী হয় তার কাছে পাশগুলি পুত্রজন্মের তুল্য (আনন্দদায়ক) এবং মধুসংপৃক্ত। আবার (প্রতিপক্ষের ) পরিবৃদ্ধির দ্বারা পাশাগুলি দ্যূতকারের বিনাশকারী হয়ে থাকে।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ :- ৮
“ত্রি পঞ্চাশঃ ক্রীলতি ব্রাত এষাং
দেব ইব সবিতা সত্যধর্মা
উগ্রস্য চিন্মন্যবে না ণমন্তে
রাজা চিদেভ্যো নম ইৎ কৃণোতি।।”
বঙ্গানুবাদ:- সত্যধর্মা (যাঁর বিধানের কখনও অন্যথা হয় না সেই) সবিতৃদেবের ন্যায় এই তিপ্পান্ন সংখ্যক অক্ষের দলটি (ক্রীড়ার ছকের উপর) বিহার করে। অতি শক্তিশালীর ক্রোধের জন্যও তারা নত হয় না বা বশীভূত হয় না। রাজা পর্যন্তও এদের উদ্দেশ্যে নমস্কার করে থাকেন।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ:- ৯
” নীচা বর্ত্তন্ত উপরি স্ফুর-
ন্ত্যঅস্তাসো অস্তবন্তং সহন্তে।
দিব্যা অঙ্গারা ইরিণে ন্যুপ্তাঃ।
শীতাঃ সন্তো হৃদয়ং নির্দহন্তি।।”
বঙ্গানুবাদ :- অক্ষগুলি নীচের দিকে অবস্থান করে, আবার (দ্যূতকারের হৃদয়ের ) উপরে স্ফুরিত হয়, হস্তাবিহীন হয়েও তারা হস্তবানকে পরাস্ত করে। (অক্ষগুলি) দিব্য অঙ্গারসদৃশ অক্ষক্রীড়ার ছকের উপর নিক্ষিপ্ত হয়েছে, শীতল হয়েও তারা হৃদয়কে নিঃশেষে দগ্ধ করে থাকে।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ :- ১০
” জায়া তপ্যতে কিতবস্য হীনা
মাতা পুত্রস্য চরতঃ ক্ব স্বিৎ।
ঋণাবা বিভ্যদ্ধনমিচ্ছমাণো-
অণ্যেষামস্তমুপ ণক্তমেতি।।”
বঙ্গানুবাদ:- কোথায় কোথায় (এখানে ওখানে) বিচরণকারী কিতবের পত্নী পরিত্যক্ত অবস্থায় সন্তাপযুক্ত হয়, তার জননী (পুত্রের জন্য) পরিতাপ করে। ঋণবান্ কিতব (পাওনাদারগণের ভয়ে) ভীত হয়ে ধনলাভের ইচ্ছায় রাত্রিতে অন্যের গৃহে (চৌর্যার্থ) গমন করে।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ:- ১১
“স্ত্রিয়ং দৃষ্ট্বায় কিতবং ততা-
পাণ্যেষাং জায়াং সুকৃতং চ যোণিম্।
পূর্বাহ্নে অশ্বান্ যুযুজে হি বভ্রূ-
ন্ তসো অগ্নেরন্তে বৃষলঃ পপাদ।।”
বঙ্গানুবাদ:- অন্যের প্রত্নীভূত নারীকে এবং সুসংস্কৃত গৃহ দর্শন করে দ্যূতকার পরিতাপযুক্ত হয়। প্রাতঃকালে সে বভ্রুবর্ণের পরিব্যাপরশীল অক্ষগুলিকে যুক্ত করেছিল, (অপরাহ্নে) সে (হীন) চন্ডালের ন্যায় অগ্নির সমীপে (ভূমিতে) শয়ণ করে।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ:- ১২
” যো বঃ সেনানীর্যহতো গণস্য
রাজা ব্রাতস্য প্রথমো বভূব
তস্মৈ কৃণোমি ণ ধনা রুণধ্মি
দশাহং প্রাচীস্তদৃতং বদামি।।”
বঙ্গানুবাদ :- হে অক্ষগণ, তোমাদের বিশাল দলের মধ্যে যে অক্ষ সেনাপতি ও অধিপতিতুল্য, তোমাদের সংঘ মধ্যে যে মুখ্য বা প্রধান, তার উদ্দেশ্যে আমি ওই দশ (অঙ্গুলি ) পুরোভাগে সংযুক্ত করছি (অর্থাৎ অঞ্জলি বদ্ধ হয়ে প্রণাম জানাচ্ছি )। আমি আর (খেলায়) ধন দান করব না। একথা আমি সত্যই বলছি।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ:- ১৩
” অক্ষৈর্মা দীব্যঃ কৃষিমিৎ কৃষস্ব
বিত্তে রমস্ব বহু মন্যমানঃ।
তত্র গাবঃ কিতব তত্র জায়া
তন্মে বিচষ্টে সবিতায়মর্যঃ।”
বঙ্গানুবাদ :- হে দ্যূতকার, দ্যূতক্রীড়া করো না, কৃষিকার্য -ই করো এবং যথেষ্ট মনে করে কৃষিকার্য লব্ধ ধনেই আনন্দিত হও। হে কিতব সেই কৃষিকর্মেই (গোসম্পদ লাভ করা যায়। ) সেই কর্মের দ্বারাই পত্নী লাভ হয়ে থাকে। প্রত্যক্ষগোচর মহান্ এই সবিতুদেব আমার নিকটে সে বিষয়ে নানাভাবে বলেছেন।
অক্ষ সুক্ত সংহিতা পাঠ:- ১৪
” মিত্রং কৃণুধ্বং খলু মৃলতা নো
মা নো ঘোরেণ চরতাভি ধৃষ্ণু।
নি বো ণু মন্যুর্বিশতামরাতি-
রন্যো বভ্রুণাং প্রসিতৌ ন্বস্তু।।”
বঙ্গানুবাদ:-